নতুন নিবন্ধিত দল ইনসানিয়াত বিপ্লবের পেছনে কারা

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দেশের ৪১তম রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেয়েছে ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অপরিচিত এই দলের নিবন্ধন পাওয়া নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে। এই রাজনৈতিক দল যাঁরা প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাঁরা মূলত চট্টগ্রামভিত্তিক সুন্নি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে এর নেতারা দাবি করেছেন, তাঁদের দল ধর্মভিত্তিক কোনো দল নয়। উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দলটিকে ইসি নিবন্ধন দিয়েছে গত ৮ মে।

দলটির নিবন্ধন পাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পরই ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের ব্যাপারে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ইসির গেজেট অনুযায়ী ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয় গুলশান-১ নম্বরে অবস্থিত। গত বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, সেই ঠিকানাতেই সড়কের পাশে অবস্থিত ভবনের দোতলায় দলটির কার্যালয়। সেখানে একটি দরবার হল রয়েছে এবং হলে শতাধিক চেয়ার পাতা। সামনে মঞ্চের মতো বানানো। কার্যালয়ে আরও কক্ষ রয়েছে নেতাদের বসার জন্য।

কার্যালয়েই ছিলেন দলের মহাসচিব শেখ রেহান আফজাল (রাহবার)। তিনি বলেন, ‘ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ ২০১০ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলে ইনসানিয়াত বিপ্লব বিশ্বাস করে না।’ যদিও এই দলের নেতারা চট্টগ্রামভিত্তিক সুন্নি আন্দোলনেরও নেতৃত্বে রয়েছেন।

রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য ইনসানিয়াত বিপ্লব ২০১৭ সালে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে। কিন্তু ইসি দলটিকে নিবন্ধন দেয়নি। তখন তারা হাইকোর্টে রিট করলে নিবন্ধনের পক্ষে রায় হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ইসি আপিল বিভাগে আপিল করেছিল। সর্বশেষ গত ২২ জানুয়ারি আপিল বিভাগ ইনসানিয়াত বিপ্লবের নিবন্ধনের পক্ষে রায় বহাল রাখেন।

ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সই করা দলটির নিবন্ধনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আপিল বিভাগের রায় ও আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধান অনুযায়ী ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশকে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছে।

দলটির নেতাদের সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

সর্বশেষ নিবন্ধন পাওয়া এই দল ইনসানিয়াত বিপ্লবের প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইদুর রহমান নিজামী শাহ। তিনি গবেষণার জন্য ২০২০ সালে একুশে পদক পেয়েছেন। সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইদুর রহমানের ছেলে সৈয়দ ইমাম হায়াত দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ইসলাম ধর্মভিত্তিক সংগঠন ‘বিশ্ব সুন্নি আন্দোলন’-এর প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। তাদের কর্মকাণ্ড ছিল চট্টগ্রামের মিরসরাইভিত্তিক। সেখানে পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠিত জামিয়া রহমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন সৈয়দ ইমাম হায়াত। দলের মহাসচিব শেখ রেহান আফজাল একটি ভবন নির্মাণকারী বা ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান।

ঢাকার গুলশানে বিশ্ব সুন্নি আন্দোলনের কার্যালয়কেই এখন ইনসানিয়াত বিপ্লব নামের এই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে দলটির নেতারা বলছেন, বিশ্ব সুন্নি আন্দোলন ও ইনসানিয়াত বিপ্লব সম্পূর্ণ পৃথক সংগঠন। রাজনৈতিক দল হিসেবে ইনসানিয়াত বিপ্লব ধর্মীয় কোনো দল নয়।

গুলশানের মতো জায়গায় ভাড়া নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিচালনা করছে দলটি। স্বাভাবিকভাবেই দলের আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দলের নেতারা দাবি করছেন, শুভাকাঙ্ক্ষীদের দান, সংগঠনের বই বিক্রি ও সদস্যদের চাঁদাই দলের আয়ের উৎস। দলের মহাসচিব শেখ রেহান আফজাল বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ।

চট্টগ্রাম কার্যালয়ে যা পাওয়া গেল

ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের প্রথম কার্যক্রম শুরু হয় চট্টগ্রামে। ২০১০ সালের দিকে এই দলের কার্যক্রমের শুরু থেকে চট্টগ্রামের চৌমুহনী হাজীপাড়া এলাকায় একটি কার্যালয় খোলা হয়। দলের চেয়ারম্যান ইমাম হায়াতের পৈতৃক জায়গায় এই কার্যালয় করা হয়। সেখানে এখনো দলের সাইনবোর্ড আছে। বর্তমানে ওই জায়গার পাশে একটি নয়তলা ভবনের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে কার্যালয় হিসেবে কার্যক্রম চলছে।

কোনো দলকে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে ইসিতে নিবন্ধিত হতে হয়। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো নতুন দলকে নিজেরা সরাসরি নিবন্ধন দেয়নি। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশে এই কমিশনের আমলে দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এর একটি ইনসানিয়াত বিপ্লব। এর আগে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ফেব্রুয়ারি মাসে তৃণমূল বিএনপি নামের আরেকটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *