গরমের সঙ্গে লোডশেডিং বাড়ছে ঢাকার বাইরে

দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাড়তি গ্যাস সরবরাহ চায় পিডিবি। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হলে বাড়বে লোডশেডিং।

বোরোর সেচ মৌসুম এবং পবিত্র রমজান মাসকে গুরুত্ব দিয়ে রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছিল ঈদের আগে। এতেও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকার মানুষ কিছুটা লোডশেডিংয়ে ভুগেছে। এরপর ঈদের ছুটি স্বস্তি নিয়ে আসে। ছুটি শেষ, দুই দিন ধরে তাপমাত্রাও বাড়ছে; এর সঙ্গে ঢাকার বাইরে বাড়তে শুরু করেছে লোডশেডিং।

চাহিদার চেয়ে কম সরবরাহ থাকায় বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, লম্বা ছুটির পর কলকারখানা ও সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান খুলেছে। গরমও বেড়েছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়েনি। দুই দিন ধরে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি সরবরাহ–ঘাটতি হচ্ছে। মূলত জ্বালানির অভাবে উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, ঈদের আগে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। এখন আবার উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ হয়ে আছে। গ্যাসের সরবরাহ আরও বাড়াতে পেট্রোবাংলাকে অনুরোধ করা হয়েছে।

মে মাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ধরে ১৬ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। গতকাল সোমবার পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের কম। সর্বশেষ সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে ১৯ এপ্রিল রাত ৯টায়, ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট। অবশ্য পরিস্থিতি গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ভালো। তখন ডলার-সংকটে পড়ে জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য সরকার পরিকল্পিত লোডশেডিং করেছিল।

পিডিবির তথ্য বলছে, বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে ২২ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে জ্বালানির (গ্যাস, তেল, কয়লা, পানি) অভাবে উৎপাদন করা যাচ্ছে না প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট। আর যান্ত্রিক ত্রুটি ও রক্ষণাবেক্ষণে থাকার কারণে উৎপাদন করা যাচ্ছে না ২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট।

তবে পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সেচ ও পবিত্র রমজানের সময় সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করা হয়েছে। ছুটির পর এখন আবার চাহিদা বাড়ছে। দুই–তিন দিনের মধ্যে পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন শুরু করা যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রও উৎপাদনে আসবে। বিদ্যুৎ সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।

বন্ধ রামপাল, শঙ্কায় পায়রা

ডলার–সংকটে কয়লাভিত্তিক দুটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আবারও টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। সময়মতো ডলার না পাওয়ায় কয়লা আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। কয়লার অভাবে দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ হয়ে আছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। ডলার না পেলে উৎপাদন বন্ধ হতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রার। আর এতে বাড়তে পারে লোডশেডিং। এ দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৮৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

গত ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসার পর এ পর্যন্ত কয়েক দফায় বন্ধ হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানায় নির্মিত বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। গত ১৫ এপ্রিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। চার দিন পর এটি আবার চালু হয়। কিন্তু কয়লার অভাবে ২৪ এপ্রিল থেকে এটি আবার বন্ধ হয়ে যায়। নতুন করে আমদানি করা কয়লার জাহাজ আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রামে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ একরাম উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ডলারের কারণে কয়লা আমদানি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। কয়লার জাহাজ চলে আসবে মঙ্গলবার (আজ)। এরপর দুই দিনের মধ্যে রামপালে উৎপাদন শুরু হবে।

কয়লা আমদানি নিয়ে একই সমস্যায় পড়েছে বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসি) নির্মাণ করা পটুয়াখালীর কয়লাভিত্তিক পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। দীর্ঘদিন ধরে কয়লার টাকা বকেয়া রেখে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালিয়ে আসছে তারা। গত ফেব্রুয়ারিতে কিছু ডলারের ব্যবস্থা করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে কেন্দ্রটির উৎপাদন সচল থাকে। এখন নতুন করে বকেয়া বিলের চাপে পড়েছে কেন্দ্রটি।

চট্টগ্রামে গতকাল তিনবার লোডশেডিংয়ের কথা বলেছিল পিডিবি। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে পাঁচবার। পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, দিনে ২০০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট সরবরাহ কম পাচ্ছেন তাঁরা। তাই সূচি মেনে লোডশেডিং করা যাচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *